Blog Details
Blog Details
বাংলাদেশিদের বিদেশ ভ্রমণ প্রবণতা: দ্বিগুণ বৃদ্ধি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
Feb 15, 2024
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলস্বরূপ, দেশের নাগরিকদের মধ্যে বিদেশ ভ্রমণের প্রবণতাও দ্রুতগতিতে বাড়ছে। এই প্রবণতা সম্পর্কে সাম্প্রতিক তথ্য ও বিশ্লেষণ নিয়ে আজকের আলোচনা।
সরকার ও কূটনৈতিক মিশনের জন্য প্রযুক্তি পরিষেবা প্রদানকারী বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠান ভিএফএস গ্লোবালের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ভিসা আবেদনের পরিমাণ ২০২২ সালের তুলনায় প্রায় ১৯৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ, কেবল এক বছরেই বিদেশ ভ্রমণে আগ্রহী বাংলাদেশি নাগরিকদের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এমনকি ২০২০ সালের প্রাক-মহামারি সময়ের সাথে তুলনা করলে এই বৃদ্ধির হার আরও চমকপ্রদায়ক - ২৩৩ শতাংশ!
এই উল্লেখযোগ্য প্রবণতা বৃদ্ধির পেছনে কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে:
অর্থনৈতিক উন্নয়ন: বাংলাদেশের অর্থনীতি ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে, গড়ে মানুষের আয়-কম্মনী বেড়েছে, জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। ভ্রমণ এখন আর শুধু অভিজ্ঞতার বিষয় না হয়ে, অনেকের কাছে জীবনমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভিসা প্রক্রিয়ার সহজীকরণ: বিগত কয়েক বছরে অনেক দেশই বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করেছে। অনলাইন আবেদন, কাগজপত্র কমানো, প্রক্রিয়ার দ্রুত সম্পাদন - এইসব উদ্যোগ ভ্রমণে আগ্রহীদের জন্য ব্যাপক সুবিধা এনে দিয়েছে।
ভ্রমণ খরচ কমে যাওয়া: বিমান ভাড়া, থাকা-খাওয়া, ভ্রমণসহায়ক পরিষেবা - সবকিছুরই খরচ ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। এর ফলে বিদেশ ভ্রমণ এখন অনেক বেশি সাশ্রয়ী হয়ে উঠেছে।
সামাজিক মাধ্যমের প্রভাব: বিশ্বজুড়ে ছুটি-মেতে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করা হয় সামাজিক মাধ্যমে। এই ছবি ও ভিডিও দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হন নতুন জায়গা দেখতে, নতুন সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যেতে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা:
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশিদের বিদেশ ভ্রমণ প্রবণতা আগামী দিনে আরও বাড়বে। এর পেছনে কাজ করবে নগরায়নের বৃদ্ধি, মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রসার, ভিসা প্রক্রিয়ার আরও সহজীকরণ, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, বিমান পরিবহনের সুবিধা বৃদ্ধি ইত্যাদি বিভিন্ন কারণ। এছাড়াও, কর্মজীবনের সুযোগ, শিক্ষা গ্রহণ, ব্যবসায় প্রসার ইত্যাদি উদ্দেশ্যেও বিদেশ ভ্রমণের প্রবণতা বাড়তে পারে।
চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ:
এই প্রবণতার সঙ্গে কিছু চ্যালেঞ্জও জড়িত। যেমন, দক্ষ জনশক্তির অভিবাসন, বিদেশি মুদ্রার চাহিদা বৃদ্ধি ইত্যাদি। তবে, এই প্রবণতাকে সুযোগ হিসেবেও দেখা যেতে পারে। বিদেশ ভ্রমণ থেকে আয়, পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সুদৃঢ়ীকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
সরকারের ভূমিকা:
বাংলাদেশিদের বিদেশ ভ্রমণকে আরও সহজ ও নিরাপদ করতে সরকারের কিছু পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। যেমন:
বাংলাদেশিদের বিদেশ ভ্রমণকে আরও সহজ ও নিরাপদ করতে সরকারের কিছু পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। যেমন:
- ভিসা প্রক্রিয়া আরও সহজীকরণ ও দ্রুত সম্পাদন।
- বিমান ও ভ্রমণ সংযোগ বাড়ানো।
- পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে বিনিয়োগ ও উদ্যোগ নেওয়া।
- বিদেশি মুদ্রার লেনদেন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।
বাংলাদেশিদের বিদেশ ভ্রমণ প্রবণতা দ্বিগুণ হওয়া একটি ইতিবাচক লক্ষণ। তবে, এই প্রবণতাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে হবে। সরকার ও বেসরকারি খাতের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিদেশ ভ্রমণকে আরও সহজ, নিরাপদ ও লাভজনক করে তোলা সম্ভব। এতে করে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
আশা করি, এই আলোচনাটি আপনাদের উপকারে আসবে। আপনাদের মতামত ও অভিজ্ঞান ভাগ করে নিতে আমরা সবসময় উৎসাহিত।